ভয়াবহ বন্যায় বিপর্যস্ত ১২ জেলা, মৃত্যু ৮
দিনাজপুর টিভি ডেস্ক
আপলোড সময় :
২৩-০৮-২০২৪ ০২:১৭:৪৪ পূর্বাহ্ন
আপডেট সময় :
১২-১০-২০২৪ ১০:০৭:৫৯ অপরাহ্ন
ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, চট্টগ্রাম, খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি, কক্সবাজার, সিলেট, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জে বন্যা।
উজানে ভারতের ত্রিপুরা থেকে নেমে আসা ঢল ও গত কয়েক দিনের প্রবল বর্ষণে দেশের ১০ জেলায় আকস্মিক বন্যা দেখা দিয়েছে। পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন ও ক্ষতির মুখে পড়েছেন ৩৬ লাখ মানুষ। তবে বন্যাকবলিত আরও দুই জেলার খবর পাওয়া গেছে। পানিতে ডুবে ও বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে গত দুই দিনে চার জেলায় আটজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।
গত বুধবার থেকে আট জেলায় বন্যা পরিস্থিতি দেখা দেয়। গতকাল বৃহস্পতিবার আরও চার জেলাসহ মোট ১২ জেলা বন্যাকবলিত হয়ে পড়ে। জেলাগুলো হলো ফেনী, কুমিল্লা, নোয়াখালী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, চট্টগ্রাম, খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি, কক্সবাজার, লক্ষ্মীপুর, সিলেট, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ। বন্যার্তদের সহায়তায় পাঁচ জেলায় সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। বন্যার্তদের মাঝে ত্রাণ ও খাদ্য বিতরণ করছেন সেনাসদস্যরা।
বন্যার পানিতে রেললাইন তলিয়ে যাওয়ায় গতকাল থেকে চট্টগ্রাম ও সিলেটের সঙ্গে সারা দেশের ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। ঢাকা–চট্টগ্রাম মহাসড়কের অনেক স্থানে পানি। ওই সড়কে যানবাহন চলছে ধীরগতিতে। বন্যাকবলিত অনেক এলাকায় বিদ্যুৎ নেই। দীর্ঘ সময় ধরে বিদ্যুৎ না থাকায় অনেক মোবাইল টাওয়ার অচল হয়ে পড়েছে। এতে কার্যত ওই সব এলাকার মানুষ যোগাযোগবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন।
আকস্মিক বন্যায় বড় বিপর্যয় দেখা দিয়েছে ফেনীতে। ফুলগাজী, পরশুরাম ও ছাগলনাইয়ার পর ফেনী পৌর শহরও গতকাল পানিতে তলিয়ে গেছে। কোথাও হাঁটু, কোথাও কোমর, কোথাও বুকসমান পানি।
৩৬ লাখ মানুষ বন্যাকবলিত
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম গতকাল সন্ধ্যায় সাংবাদিকদের জানান, দেশের বন্যাকবলিত জেলা ১০টি। আর প্রায় ৩৬ লাখ মানুষ বন্যাকবলিত। বন্যায় দুজনের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে। টেলিযোগাযোগ সংযোগ বিচ্ছিন্ন থাকায় অনেক তথ্য জানা যাচ্ছে না। অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টারা বন্যাকবলিত এলাকা পরিদর্শনে যাবেন বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব।
বন্যার কারণ সম্পর্কে বলতে গিয়ে শফিকুল আলম জানান, আবহাওয়া অধিদপ্তর ও পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, কয়েক দশকের মধ্যে বাংলাদেশে টানা বৃষ্টি হয়েছে এবার। ১৬ আগস্ট থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে ভারী বর্ষণ শুরু হয়েছিল। আবহাওয়া অফিসের বরাত দিয়ে প্রেস সচিব জানান, আগামীকাল শনিবার নাগাদ বৃষ্টি একটু কমতে পারে। বন্যার্তদের উদ্ধারে সেনা মোতায়েন
আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) জানিয়েছে, গতকাল চট্টগ্রামের মিরসরাই, কুমিল্লার বুড়িচং, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া, হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জ এবং মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় বন্যার্তদের উদ্ধার কার্যক্রমে সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ১৭ পদাতিক ডিভিশন, ২৪ পদাতিক ডিভিশন এবং ৩৩ পদাতিক ডিভিশনের সেনাসদস্যরা পানিবন্দী মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিতে সহায়তা করছেন। এ ছাড়া ফেনী, চট্টগ্রাম, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জে সেনাবাহিনীর পাঁচটি চিকিৎসা দল সহায়তার জন্য মোতায়েন করা হয়েছে।
সেনাবাহিনী এ পর্যন্ত প্রায় ছয় হাজার বন্যাদুর্গত ব্যক্তিকে উদ্ধার করে বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে পাঠিয়েছে। পাশাপাশি বন্যার্তদের মধ্যে ত্রাণ ও খাদ্য বিতরণ করছে।গ্রামের পর গ্রাম প্লাবিত
ফেনী সদরের বিভিন্ন এলাকা কার্যত পানির নিচে। গতকাল দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত দেখা যায়, কোথাও বুকপানি, কোথাও গলাপানি। দক্ষিণ মাইজবাড়িয়া, হাফেজিয়া মাদ্রাসা, ভাঙ্গা তাকিয়াসহ একাধিক গ্রামে এ দৃশ্য দেখা যায়।
গ্রামের পর গ্রামের বেশির ভাগ একতলা ঘর তলিয়ে গেছে। ফসলি জমি, পুকুর, রাস্তাঘাট ডুবে আছে। কেউ কেউ কলাগাছ দিয়ে ভেলা বানিয়ে নিরাপদ স্থানে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। আবার কেউ বুকপানিতে সাঁতরে গন্তব্যে যাওয়ার চেষ্টা করছেন।
মাইজবাড়িয়া এলাকার ভেতরে একটা গাছ ধরে দাঁড়িয়ে ছিলেন সুফিয়া বেগম নামের এক নারী। পানির প্রবল স্রোত তাঁকে টেনে নিয়ে যাচ্ছিল। পরে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা তাঁকে উদ্ধার করেন।
টানা বর্ষণের ফলে নোয়াখালীর আটটি উপজেলায় সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। ডুবে গেছে ফেনী-নোয়াখালী সড়কের চৌমুহনী–মাইজদী অংশের একাধিক এলাকা। নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে ঘরবাড়ি ছেড়ে ছুটে চলছে অনেকে।
গতকাল সকালে কথা হয় নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার একলাশপুর উচ্চবিদ্যালয়ে আশ্রয় নেওয়া ননী বেগমের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘৭০ বছর বয়স আমার। এর আগেও অনেকবার এ রকম বৃষ্টি দেখেছি। দিনের পর দিন বৃষ্টি হয়েছে, কিন্তু কোনোবার এত পানি দেখিনি।’
কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম, নাঙ্গলকোট ও মনোহরগঞ্জে ১০ লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। তলিয়ে গেছে কয়েক শ মাছের ঘের, আউশ ধান ও আমনের বীজতলা। ঢলের সঙ্গে কুমিল্লায় এক দিনেই ২২০ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। আখাউড়ায় বাঁধ ভেঙে ৩৬টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। গত বুধবার সকাল থেকে আখাউড়া আন্তর্জাতিক ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট ও স্থলবন্দরের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া খাল দিয়ে সীমান্তের ওপার থেকে পাহাড়ি ঢল আসতে শুরু করে। বুধবার সকাল থেকে ইমিগ্রেশনের সব কার্যক্রম বন্ধ আছে।
চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি, রাউজান ও হাটহাজারীর বেশির ভাগ গ্রামীণ সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। বন্যায় পানিবন্দী হয়ে আছেন এই তিন উপজেলার প্রায় তিন লাখ মানুষ। বন্যার পানিতে তলিয়ে আছে হাটহাজারী, ফটিকছড়ি, নাজিরহাট, খাগড়াছড়ি আঞ্চলিক মহাসড়ক।
ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে কক্সবাজারের রামুতে পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন অন্তত ২৩ হাজার মানুষ। জেলার পেকুয়া উপজেলার শিলখালী ও টৈটং ইউনিয়নের অন্তত ১১টি গ্রামীণ সড়ক ভেঙে গেছে।
প্রবল বর্ষণ ও ঢলে ভেসে গেছে পাহাড়ি শহর খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটির সমতল ও নিচু এলাকা, খেতখামার ও পুকুর। ডুবে আছে বিস্তীর্ণ এলাকার বসতবাড়ি। খাগড়াছড়ি শহরের সঙ্গে বিভিন্ন এলাকার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
লক্ষ্মীপুরেও বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। গতকাল সকাট্রেন চলাচল বন্ধ
ফেনী ও কুমিল্লায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় চট্টগ্রামের সঙ্গে সারা দেশের ট্রেন চলাচল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয় রেলওয়
নিউজটি আপডেট করেছেন : Dinajpur TV
কমেন্ট বক্স